কম দামের চাল উন্নত ব্রান্ডের বস্তায় ভরে বিক্রি, চালের দাম নিয়ে প্রতারণা

নবকণ্ঠ ডেস্ক:

চালের বাজারে প্রতারণা বেড়েছে। কম দামের চাল বেশি দামে বিক্রির জন্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন। কম দামি চাল উন্নত ব্র্যান্ডের বস্তায় ভর্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার চাল থেকে সুগন্ধি বের হতে এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানিকারক ও মিল মালিক থেকে খুচরা বাজারে আসতে চালের দরে কয়েক দফায় হাত বদল হয়। হাত বদলে বেড়ে যাচ্ছে চালের দাম। ফলে পাইকারি বাজারে চালের দাম কমার কথা বলা হলেও ভোক্তারা সুফল পাচ্ছেন না।

চট্টগ্রামের চাক্তাই ও পাহাড়তলীতে প্রধান পাইকারি বাজারের পাশাপাশি নগরীর আরো দুই-তিনটি স্থানে চালের পাইকারি বাজার রয়েছে। চালের বাজারে অভিযান পরিচালনাকারী সরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা বলে এসব অনিয়মের তথ্য জানা গেছে। বিশেষ করে চালের বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বস্তা ব্যবহার হচ্ছে। চালের বস্তা পরিবর্তন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। অতি মুনাফালোভী একশ্রেণির অসাধু চাল বিক্রেতা এ ধরনের প্রতারণায় নেমেছে। এতে ক্রেতারা নিম্নমানের চাল কিনে প্রতারিত হচ্ছে। চাল ব্যবসায়ী শান্ত দাশগুপ্ত বলেন, চাক্তাই ও মাঝিরঘাট এলাকায় কয়েক জন খালি বস্তা বিক্রেতা রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে খালি বস্তা কিনে কিছু অসাধু চাল বিক্রেতা ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। ইতিপূর্বে চাক্তাই থেকে র্যাব অভিযান চালিয়ে কয়েক জনকে জরিমানাও করে। আবার চাল থেকে সুগন্ধি বের হওয়ার জন্য এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রামের বাজারে উত্তরবঙ্গ ও ভারত থেকে আমদানি করা চাল বিক্রি হয়ে থাকে। অভিযানে দেখা গেছে, অতি মুনাফার লোভে অনেক পাইকারি বিক্রেতা বস্তা পরিবর্তন করেছেন।

এদিকে আমদানিকারক, মিল মালিক ও পাইকারি বিক্রেতা সবাই দাবি করছেন বাজারে চালের দাম কমেছে। পাইকারি বাজারে প্রতি ক্যাটাগরির আতপ, সিদ্ধ চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা কমেছে। কিন্তু দাম কমার কোনো সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা। তারা খুচরা বাজার থেকে আগের মতোই চাল কিনছেন। বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাজার নিয়ে কার্যকর কোনো মনিটরিং হচ্ছে না। সরকারি চালের হিসাব থাকলেও বেসরকারিভাবে মজুত চালের কোনো হিসাব নেই। ফলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

চাল আমদানিকারক আব্দুল হান্নান ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমি ৫০০ টন সিদ্ধ চাল আমদানি করেছি। আমদানির পর দেশে চালের বাজার কমে যায়। গত দুই সপ্তাহে মণে ২০০ টাকা কমে গেছে। এতে আমার ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। আতপ চাল খুবই কম আমদানি হয়েছে।’ অপর আমদানিকারক মহিউদ্দিন আহমেদ বেলাল বলেন, ‘আমি ২০০ টন আতপ আমদানি করেছিলাম। বাজারে দাম কমে যাওয়ায় কেজিতে দুই টাকা লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে।’

কিন্তু এ আমদানিকারকের বাজার দরের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) প্রায় ২০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। একজন আমদানিকারক জানান, তিনি স্বর্ণা সিদ্ধ প্রতিবস্তা ২ হাজার ৮০ টাকায় পাইকারি বাজারে সরবরাহ দিয়েছে। কিন্তু সেই চাল পাইকারি বাজারে প্রতিবস্তা ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট সিদ্ধ, জিরাশাইল, কাটারিভোগ, পাইজাম প্রতিটি চাল আমদানিকারকদের কাছ থেকে নিয়ে পাইকারিতে বস্তাপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা লাভে বিক্রি হচ্ছে। তাদের থেকে খুচরা পাইকাররা নিয়ে আরো বাড়তি দামে বিক্রি করছে।

পাহাড়তলী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। মূলত চালের বাজার মনিটরিং হচ্ছে না। মিল মালিক, আমদানিকারক, শিল্প গ্রুপ সবার কাছে চালের বিশাল মজুত রয়েছে। কিন্তু কার কাছে কি পরিমাণ চাল মজুত আছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ফলে মজুতদাররা চালের বাজার একবার বাড়ায় আবার কমায়। সূত্র: ইত্তেফাক

সংবাদটি সর্বমোট 1,109 বার পড়া হয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *