॥ ইফতেখারুল অনুপম ॥
জেলায় সরিষা ক্ষেতগুলো থেকে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে মৌ চাষ। মধু আহরণে জেলার ১২ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৮ হাজার মৌ বক্স বসানো হয়েছে।
দেশের শিক্ষিত বেকারদের কাছে মৌ চাষ এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মৌ চাষের ফলে একদিকে যেমন দেশে খাঁটি মধুর চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
জেলার জমিগুলো এখন সরিষা ফুলে সমৃদ্ধ। আর এসব এলাকায় ঘুরে-ঘুরে কৃত্রিমভাবে মধু আহরণ করছে মৌ চাষিরা। স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মৌ চাষিরা এখন মধু আহরণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সারাবছরই বিভিন্ন প্রকার ফল-ফসল ও ফুলের চাষ হয়ে থাকে জেলায়। এখান থেকে সারা বছরই মধু সংগ্রহ করা সম্ভব।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার ১২টি উপজেলা জুড়ে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। সরিষা ক্ষেতের চারপাশে দেখা মিলছে সারি-সারি মৌ বক্স। স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন জেলা হতে আসা মৌ চাষিরা সরিষা ফুল থেকে কৃত্রিমভাবে মধু সংগ্রহের জন্য মৌ বক্স স্থাপন করেছেন। পর্যায়ক্রমে মৌ বক্স এবং মধু সংগ্রহকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৌ চাষিদের বক্সে পালিত মৌমাছি সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌ বক্সে জমা করে। মৌ চাষিরা প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। মৌ চাষের মাধ্যমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। একইসাথে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। সরিষা ফুলের মধু যেমন খাঁটি তেমনি সুস্বাদুও। মানের দিক থেকেও উন্নত হওয়ায় এ মৌসুমে মধুর চাহিদাও বেশি থাকে। মৌ চাষের কারণে সরিষার ফলনও ভালো হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ মৌ চাষি ও সরিষা চাষিদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছে।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১২টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবার ৫৮ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ করা হয়েছে। জেলার ১২ টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৮ হাজার মৌ বক্স বসানো হয়েছে। মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ টন। এখন পর্যন্ত আহরণ করা হয়েছে ৫০ টন।
দেলদুয়ার উপজেলার সদরের মৌলভী পাড়ার মৌ চাষি নূরজাহান আক্তার রূপসী গ্রামে ৪৫ টি বক্স বসিয়েছেন। তিনি বলেন, এবার ৪৫টি মৌ বক্স স্থাপন করেছি। আমি ও আমার স্বামী দুজনেই এ মৌ চাষের সাথে জড়িত। এবার কুয়াশার কারণে তেমন মধু হয়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র একবার মধু সংগ্রহ করেছি।
নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নে মৌ বক্স বসিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলার আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এবার আমি ২২০টি মৌ বক্স বসিয়েছি। আবহাওয়া ভালো না থাকার কারণে মধু সংগ্রহ কম হয়েছে। আমার ধারণা ছিল ৩০-৩৫ মণ মধু সংগ্রহ করবো। কিন্তু ২০-২৫ মণ মধু সংগ্রহ করেছি। একটি বক্স থেকে ৫-৬ বার মধু সংগ্রহ করা যায়। প্রতি বক্স থেকে ৪-৫ কেজি মধু পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত আমি ৪ বার মধু সংগ্রহ করেছি।
আট বছর ধরে মৌ চাষের সাথে জড়িত সাতক্ষীরা জেলার মৌ চাষি আব্বাস আলী। তিনি বলেন, মৌ চাষে খরচ অনেক। বছরে সাত মাস মধু হয় না। এ সময় মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখতে চিনি খাওয়াতে হয়। এ বছরের চিনির দামও বেশি। এ বছরের মধু সংগ্রহে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক আগে থেকে মৌ চাষ করছি। সরকার যদি সরাসরি মধু সংগ্রহের ব্যবস্থা করতো। তাহলে আমরা সঠিক দামটা পেতাম। এতে আমাদের লাভ হতো বেশি।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহ্সানুল বাসার বলেন, টাঙ্গাইল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরিষা উৎপাদনকারী জেলা। এবছর আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেশি করেছি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মৌ বক্স নিয়ে মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহের জন্য টাঙ্গাইলে এসেছে। আগে কৃষক ভাবতেন মৌমাছি সরিষার ফুল খেয়ে ফেলতো। এজন্য সরিষা চাষিরা মৌ চাষে বাধা প্রদান করতো। কিন্তু আমরা কৃষকদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে মৌমাছি সরিষার ফুলের কোন ক্ষতি করে না। পরাগায়ণে সহায়তা করে যার ফলে সরিষার ফলন ২০-৩০ ভাগ বৃদ্ধি করে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌ চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে। সূত্র: বাসস
সংবাদটি সর্বমোট 115 বার পড়া হয়েছে