নরসিংদীতে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাসের চেয়ারম্যানসহ ০৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকের প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অন্যতম হোতা ও সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানির চেয়ারম্যান শাহ আলমসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ডকুমেন্ট জব্দ করা হয়।

রোববার (১৩ মার্চ) দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, শনিবার রাতে নরসিংদী জেলার ভেলানগর এলাকায় গোপন বৈঠক চলাকালে প্রতারকচক্রের অন্যতম হোতা মো. শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেন শিকদার, কাজী মানে উল্লাহ, মো. সুমন মোল্লাহ ও আ. হান্নান মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আল মঈন বলেন, চক্রটি ২০১০ সালে নরসিংদী জেলার সদর থানার চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া এলাকায় একটি শরিয়াভিত্তিক শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে। তারা অতি সুকৌশলে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সুদমুক্ত ব্যবসায় প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে। ধর্মের দোহাই দিয়ে সাধারণ জনগণকে ভুল বুঝিয়ে তাদের সংস্থার সদস্য করা হত।

সুদমুক্ত জীবন-যাপন ছিল তাদের প্রতিষ্ঠানের লোক দেখানো মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। চক্রের অন্যতম হোতা শাহ আলম নিজে কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে ৪টি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে এবং ২৪ জন জনবলের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে। এছাড়া অতিরিক্ত ২০ জন পরিচালক নিয়োগ দেয়। আত্মীয় বা পরিচিতদের তারা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দিত। পরবর্তীতে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন থানার জনবহুল ও ব্যবসায়ীক এলাকায় জাঁকজমকপূর্ণ শাখা অফিস স্থাপন করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- শাহ সুলতান এমসিএস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি., স্বদেশ টেক্সটাইল লি., শাহ সুলতান টেক্সটাইল লি. ও শাহ সুলতান প্রপার্টিজ লি.।

কাওরান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়; মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রায় ৩ শতাধিক কর্মী রয়েছে। যাদের কোনো প্রকার বেতন দেওয়া হয় না। তাদের গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে এককালীন ১০ শতাংশ ও বছরান্তে ৬ শতাংশ অর্থ প্রাপ্তির প্রলোভন দেখানো হত। প্রতারকরা বিনিয়োগকারীদের বার্ষিক ১২-১৬ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখাতো।

এছাড়াও তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে উচ্চ মুনাফায় মাসিকভিত্তিতে ডিপিএস’র মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতো। ফলশ্রুতিতে তারা গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধিতে সক্ষম হয়। তারা বেশকিছু গ্রাহককে উচ্চ মুনাফায় লোন দেয়। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান না হলেও তারা ব্যাংকের মতই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করতো। গ্রাহকদের সংগৃহীত টাকা ল্যান্ড প্রজেক্ট টেক্সটাইল ও নিজস্ব অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তারা এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। গ্রাহকদের তথ্যমতে, সংগৃহীত টাকার পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, করোনার ক্রান্তিলগ্নে যখন মানুষের টাকার প্রয়োজন হয়; তখন ভুক্তভোগীরা তাদের আমানতকৃত টাকা শাহ সুলতান এমসিএস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি.- এর কাছে উত্তোলনের আবেদন করে। তখনই তারা করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন অজুহাতে গচ্ছিত টাকা ফেরত না দিতে গড়িমসি শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওমর ফারুক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুদ রানা গ্রাহকদের লগ্নিকৃত টাকা দিয়ে নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে ৫-৬ একর জমি নিজেদের নামে কেনে।

এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির নামে নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ একর জমি রয়েছে। টাকা ফেরতের জন্য গ্রাহকদের ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।

র‌্যাব জানায়, দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ব্যবসায় খুব সহজেই উদ্বুদ্ধ হয় বিধায়, সুদবিহীন ব্যবসার প্রলোভন দ্রুত মানুষের মনে আস্থার জায়গা তৈরি করে। শরিয়া ভিত্তিক ব্যবসাকে প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে টাকা আত্মসাতের কূটকৌশল খুব সহজেই সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। সম্প্রতি সমবায় সমিতির নামে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বর্ণিত প্রতারণার ঘটনা প্রচারে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য ও আলোড়নের সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দায়ের করে। নরসিংদী জেলার প্রায় সকল থানার ৫-৬ হাজার সাধারণ পেশাজীবী মানুষ একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ব্যবসায়ে অতিরিক্ত লভ্যাংশ প্রাপ্তির আশায় শত শত কোটি টাকা অর্থ বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। বেশির ভাগ মানুষ তাদের সারাজীবনের কষ্টার্জিত জমানো অর্থ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতারকচক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষের প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। -রাইজিংবিডি.কম

সংবাদটি সর্বমোট 395 বার পড়া হয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *