নরসিংদীর শিবপুরে ৫ বছর ধরে শিকলবন্দি যুবক রাসেল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর শিবপুরে রাসেল খান (২৬) নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের সন্ধান পাওয়া গেছে। উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের দক্ষিণ জয়মঙ্গল গ্রামের মৃত আব্দুল ছালাম খানের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীন রাসেল খান তৃতীয়।

সে গত ৫ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবনযাপন করছেন। রাসেল মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে বর্তমানে বিনা চিকিৎসায় মানবিকভাবে জীবন যাপন করছে । তার শারীরিক অবস্থাও দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। তার সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে সমাজের বিত্তবানসহ সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন তার মা।

রাসেলের মা ছালমা বেগম বলেন, রাসেল ছোট থেকেই মেধাবী ছিল স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ১৪/১৫ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময় হঠাৎ করেই তার মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করি। পরে আবার একটি মারামারির ঘটনায় মাথায় আঘাত পায় সে। তারপরে স্থানীয়ভাবে ও ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। একপর্যায়ে মানুষকে মারধর করা শুরু করে, নানাভাবে ক্ষতি করতে থাকেন।

সবসময় গালিগালাজ করে। ধীরে ধীরে আরো পাগলামি বাড়তে থাকে তার। আমাকে অনেক মারধর করে। বাড়িঘর ভাঙচুর করে। তাই বাধ্য হয়ে তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। বিগত ৫ বছর যাবত শিকলবন্দি সে। আগে তার মানসিক অবস্থা ভালো দেখলে মাঝে মধ্যে শিকল খুলে দেওয়া হতো। গত ৩ বছর যাবত অন্ধকার ঘরে একাধারে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি। আগে শরীরে জামা-কাপড় রাখলেও এখন রাখে না। এখানে তার নাওয়া-খাওয়া প্রশ্রাব-পায়খানা, ঘুম।

এভাবেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেটেছে তার জীবনের প্রায় ৩টি বছর। রাসেলের বাবা নেই পারিবারিক বিভিন্ন সম্যসায় আমরা এখন নিঃস্ব। তাকে নিয়ে বর্তমানে আমি মানবেতর জীবন-যাপন করছি। তাই বিনা চিকিৎসায় শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি।’ তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে সমাজের বিত্তবানসহ সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

ছেলে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মা ছালমা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ৫ বছর বেঁধে শিকলে বেঁধে রেখেছি তার নামে একটা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড নাই। এছাড়া আমি বিধবা আমার ভাতার কার্ড নাই। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাই না। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাছাড়া পারিবারিক ঝামেলা নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমি তাকে নিয়ে আর পারছি না। আমার অনেক বয়স হয়েছে আমি না থাকলে তার কি হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, রাসেল সত্যিই মানসিক ভারসাম্যহীন। তার পরিবারের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। অমানবিক জীবনযাপন করছে। পরিবারটির পাশে স্থানীয় প্রশাসন ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। উন্নত চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে উঠবে সে।

এ ব্যাপারে সংবাদ পাওয়ার পরে ২৫ জুলাই সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে তার খোঁজ-খবর নিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান।

সংবাদটি সর্বমোট 163 বার পড়া হয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *