নবকণ্ঠ ডেস্ক:
প্রতিবছর পানিতে ডুবে অনেক শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এই মৃত্যুর ঘটনা দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকে যায়। ডুবে মৃত্যুর যেসব ঘটনা ঘটে তার একটা বড় অংশ গ্রামাঞ্চলের। আর দরিদ্র পরিবারের শিশুরা এর শিকার হয় বেশি। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে সচেতনতার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
শিশুদের ডুবে মৃত্যুরোধে একটি প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে উত্থাপন হলে সেটি দ্রুত অনুমোদনের বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
আজ বুধবার ডেইলি স্টার ভবনে ‘বাংলাদেশে শিশুদের ডুবে মৃত্যু রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। গে্লাবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) সহযোগিতায় গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সমষ্টি’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এতে সভাপতিত্ব করেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ এমপি, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদষ্টো রাশেদা কে. চৌধুরী এবং জিএইচএআই’র বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস। জিএইচএআই আঞ্চলিক পরিচালক বন্দনা সাহা এতে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সমষ্টির পরিচালক মীর মাসরুর জামান। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেন জিএইচআই-এর কমিউনিকেশন ম্যানেজার সরওয়ার-ই-আলম এবং এ বিষয়ে গণমাধ্যমের তৎপরতা নিয়ে আলোচনা করেন সমষ্টির গবেষণা পরিচাল রেজাউল হক।
অনুষ্ঠানে সমষ্টি’ জানায়, গত দুই বছরে এক হাজার ৪২৬টি ঘটনায় দুই হাজার ১৫৫ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে এক হাজার ৭৯৯ জনই শিশু। পানিতে ডুবে মৃতদের ৮৩ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। গত দুই বছরে নেত্রকোনা জেলায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে। এই জেলায় ৯১ জন। অন্যদিকে ৮ বিভাগের মধ্যে গত দুই বছরে পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে ৪৯৭ জনের মৃত্যু হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে।
অনুষ্ঠানের গোলাম রহমান বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাটি বিছিন্নভাবে ঘটছে। তাই মিডিয়াতে আগে এই ঘটনাগুলো তেমনভাবে গুরুত্ব পেত না। গণমাধ্যমের তৎপরতায় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনাগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্মোচিত হচ্ছে। এখন এই মৃত্যু কিভাবে কমানো যায় সেটির পদক্ষেপ দ্রুত নিতে হবে। এই মৃত্যু রোধে সবার মধ্যে সচেতনতা জরুরি। এ ছাড়া এর জন্য সঠিকভাবে বার্তা তৈরি করাও জরুরি।
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়টি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে আছে এবং শিশু একাডেমির সহযোগিতায় আমরা একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেছি। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠন ও কর্মীর মাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, শিশুদের ও অভিভাবকদের সচেতন করতে মিডিয়াতে প্রচারণা চালালেও পানিতে ডোবা শিশু মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব। শিশুসহ পরিবারের সব সদস্যের যত্ন করেন মা। কিন্তু মায়ের প্রতি যত্নবান অনেকেই থাকেন না। এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।
রাশেদা কে চেৌধূরী বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর বিষয়টি শুধু দেশের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে দৃষ্টি আকর্ষণ নয়, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শিশুদের পক্ষে আন্দোলন বা মাঠে নামার কেউ নেই। পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু ব্যাপকভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব, এটি সবার মাথায় নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার, উপজেলা নারীবিষয়ক কর্মকর্তা এবং শিশু একাডেমিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
জিএইচএআই’র কমিউনিকেশন ম্যানেজার সারোয়ার ই আলম বলেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে চার বছরের কম বয়সী ৩০ শিশু মারা যায়। এক থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু মারা যায় ৪০ জন। সব মিলিয়ে এক থেকে ১৮ বছর বয়সী ৫০ জন শিশু-কিশোর প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যায়। প্রতিদিন এত শিশুর মৃত্যু হলেও, এ নিয়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন কম হয়।
জিএইচএআইয়ের আঞ্চলিক পরিচালক বন্দনা সাহা অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন হঠাৎ বৃষ্টি ও বন্যা দেখা দিচ্ছে। এসব বন্যার সময় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু ঘটনা ঘটছে। সূত্র: কালের কণ্ঠ
সংবাদটি সর্বমোট 228 বার পড়া হয়েছে