নবকণ্ঠ ডেস্ক:
কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ৩২টি দলই ইতোমধ্যে একটি করে ম্যাচ খেলেছে। আগামীকাল থেকে দলগুলো তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে। আগামীকাল দিনের প্রথম ও আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় গ্রুপ-বি’র দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ওয়েলস ও ইরান। দুটি দলই জানে ম্যাচটিতে জয়ী হতে পারলে নক আউট পর্বের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রাখা সম্ভব হবে।
এর আগে গত সোমবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের কাছে ৬-২ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল ইরান। একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পিছিয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে ১-১ গোলের ড্রয়ের মাধ্যমে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে ওয়েলস। ইরানকে ইংল্যান্ড বিধ্বস্ত করায় ওয়েলস ও যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সুযোগ ছিল যেকোন মূল্যে অন্তত পরাজয় এড়িয়ে ইরানের থেকে গ্রুপে নিজেদের এগিয়ে রাখা। ম্যাচের পূর্বে ড্র হবার সম্ভাবনাকেই এগিয়ে রাখা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে দাপটের সাথে ম্যাচ শুরু করেছিল তাতে ওয়েলসের সৌভাগ্য একাধিক গোল হজম করতে হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধটা অবশ্য পুরোপুরি পাল্টে যায়। পেনাল্টি স্পট থেকে ৮২ মিনিটে গ্যারেথ বেল সমতা ফেরানোর আগে ড্রাগন্সরা আরো কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল। বিশ^কাপে প্রথমবারের খেলতে নামা বেলের এটাই বিশ^মঞ্চে প্রথম গোল। যদিও ওয়েলসের তারকা এই স্ট্রাইকার তার সেরাটা দিতে পারেননি। তারপরও সেই বেলের কাঁধে ভর করেই আরো একবার নিজেদের রক্ষা করেছে ওয়েলস। এখন ইরানকে হারাতে পারলে নক আউট পর্বের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে ৬৪ বছর পর বিশ^কাপের মূল পর্বের টিকিট পাওয়া ওয়েলস।
প্রথম ম্যাচে ড্র হওয়া সত্তেও ঐ এক পয়েন্টই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে ওয়েলসের সামনে। কোচ রবার্ট পেজের দল এনিয়ে টানা ছয় ম্যাচে জয়বিহীন রয়েছে। শেষ ৯ ম্যাচে মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছে।
এদিকে ইংল্যান্ডের কাছে বিধ্বস্ত ইরান চাইবে যেকোন ভাবেই ওয়েলসের বিপক্ষে ঘুড়ে দাঁড়াতে। অভিজ্ঞ কোচ কার্লোস কুইরোজর অধীনে ইরান যে নিজেদের আগেও প্রমান করেছেন তার উদাহরনও রয়েছে। খুব বেশীদিন আগের কথা নয় সেপ্টেম্বরে দুটি প্রীতি ম্যাচে বিশ^কাপের দুই দল উরুগুয়েকে হারানোর পর সেনেগালের সথে ড্র করেছিল কুইরোজ বাহিনী। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সান্তনার দুটি গোলই এসেছে দলের সেরা স্ট্রাইকার মেহদি টারেমির কাছ থেকে। ওয়েলসকেও যে টারেমি স্বস্তিতে থাকতে দিবেন না তা সহজেই অনুমেয়। ইনজুরি কাটিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বদলী হিসেবে খেলতে নামা সারদার আজমুনও ইরানকে বাড়তি আত্মবিশ^াস যোগাচ্ছে। এই দুই তারকার উপস্থিতি সত্তেও ইরান শেষ নয়টি ম্যাচে দুটির বেশী গোল করতে পারেনি। এই একটি জায়গায় কুইরোজকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
এদিকে ইরানের বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে দল নির্বাচন নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হচ্ছে পেজকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে বদলী হিসেবে নেমে স্ট্রাইকার কিয়েফার মুর যেভাবে নিজেকে প্রমান করেছে তাতে মূল একাদশে জায়গা পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। এক্ষেত্রে ড্যানিয়েল জেমস চলে যেতে পারেন বদলী বেঞ্চে। ফিটনেসের অভাবে হ্যারিও উইলসনকে মূল একাদশ থেকে বাদ দেয়া হতে পারে।
মিডফিল্ডার জো এ্যালেন হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি কাটিয়ে ইরানের বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে পূর্ণাঙ্গ অনুশীলনে ফিরেছেন। ইনজুরির কারনে সেপ্টেম্বর থেকে মাঠের বাইরে ছিলেন সোয়ানসি সিটির এই মিডফিল্ডার। কাতারে আসার পর থেকে দলের বাইরে থেকে একাই অনুশীলন করেছেন এ্যালেন। বুধবার তিনি পুরো দলের সাথে যোগ দেন। মধ্যমাঠে গোঁড়ালির ইনজুরিতে পড়া ইথান আমপাডুর পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে।
প্রথম ম্যাচে মাথায় আঘাত পাওয়া গোলরক্ষক আলিরেজা বেইরানভান্ড নিশ্চিতভাবেই ইরানের মূল একাদশে থাকছেন না। তার বদলী হিসেবে ২০ মিনিটে ঐ দিন মাঠে নামা হোসেই হোসেইনির উপরই গোলবার সামলানোর দায়িত্ব থাকছে। আজমুনকে প্রথম থেকেই মাঠে নামাবেন কিনা তা নিয়ে কুইরোজ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। সোমবারের ম্যাচে বিরতির সময় তিনটি পরিবর্তন করেছিলেন কুইরোজ। টারেমির প্রথম গোলের যোগানদাতা আলি গোলিজাদেহ কুইরোজের বিবেচনায় মুল একাদশে চলে আসতে পারেন।
প্রথম ম্যাচের পর পেজ বলেছিলেন, ‘আমাদের শিক্ষা হয়ে গেছে। পয়েন্ট হারাইনি এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে বেশ পরিশ্রান্ত মনে হয়েছে। সে কারনেই শুক্রবারের ম্যাচের আগে নিজেদের সঠিকভাবে প্রস্তুত করে তোলাই এখন মূল কাজ। এই ম্যাচে একটি বিষয় আমরা নিশ্চিত করেছি, বদলী বেঞ্চ থেকে যারা উঠে এসেছে তারাই ভাল খেলেছে। বিশেষ করে ব্রেনান ও কিয়েফারের কথা এখানে না বললেই নয়। পুরো দলই বিশ্বকাপের মত সর্বোচ্চ আসরে খেলার যোগ্যতা রাখে, এটাই আমার দলের সবচেয়ে বড় শক্তি।’ সূত্র: বাসস
সংবাদটি সর্বমোট 152 বার পড়া হয়েছে