ভালোবাসা দিবসের চেয়ে ভালোবাসা বড়

নূরুদ্দীন দরজী:
ভালোবাসা একটি পরম সুখানুভূতি। আদর,স্নেহ মায়া ও আবেগ ঘনীভূত হয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি করে। এটাকে ধরা বা ছোঁয়া যায়না। ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র জিনিস। শুধুমাত্র মানব মানবীর গভীর প্রেমে বন্দি হয়ে থাকাই ভালোবাসা নয়। ভালোবাসার কারণ থেকে পৃথিবী হয়েছে। এ ভালোবাসাতে সকল শান্তি নিহিত।
-তার পর ও সুপ্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবী অশান্তিতে ভরপুর ছিলো। বর্তমান সময়ে ও অশান্তি কম নয়। এর‌ই মাঝে কোথাও কোথাও শান্তির সুবাতাস বহে । এ বাতাস আনয়ন করে প্রথমতঃ ভালোবাসা। তার পরের ভূমিকা রাখে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন। যতক্ষন শ্রদ্ধা, সম্মান ও মূল্যায়ন মানুষের অন্তরে বিরাজিত থাকে তত‌ই পৃথিবীতে বসবাস করা সার্থক হয়‌। অনেক অনেক দিন মানুষের বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। আমরা জানি বেচেঁ থাকার বিপরীত শব্দ মৃত্যু। সুন্দর এ ধরণীতে মানুষ তখনি মৃত্যু কামনা করে যখন‌ ভালোবাসা ও শান্তির বাণী ব্যর্থ পরিহাসের চোরাবালিতে ক্রন্দন করে।
ভালোবাসা এমন একটি কিছু যা সুগন্ধময় ফুলের মত সৌরভ ছড়ায়। ভালোবাসার মাধ্যমে মূল্যায়ন করলে সকলেই পুলক অনুভব করে, অনুপ্রাণিত হয়, জগতে ভালো ভালো কাজ করতে ইচ্ছে হয়। ভালোবাসার কারণে শ্রদ্ধার্ঘ্য ঢেলে সুন্দর ও সুশীল কাজ করতে মন চায়। হৃদয় মনে প্রশান্তি আনয়ন করে।
ভালোবাসা তেমন কঠিন কোন কাজ নয়। ভালোবাসা দেখাতে অর্থ ব্যয় হয়না। বলা হয়ে থাকে,” Politeness cost nothing. এটি একটি শুভ ইচ্ছে। সুন্দর করে হাসি দিয়ে কথা বলতে পারলে ভালোবাসার অঙ্কুরোদগম হয়। মাদার তেরেসা বলেছেন,”একটি হাসি দিয়েই শান্তি শুরু হয়”। হাসি মুখে মানুষের সাথে একটি কথা বলা ১০টি ভালো কাজের জন্ম দেওয়ার সমান। ভালোবাসা হৃদয়ের কাঠিন্য দূর করে চিন্তা ক্লিষ্ট মনে শান্তি এনে দেয়‌। ভালোবাসা পেলে সকল অস্থিরতা, হতাশা, ক্ষোভ,রাগ,দুঃখ-ব্যথা অভিমান নিমিষেই বিলিন হয়ে যায়। এর পরশে মানব মনে মায়া,মমতা,উদারতা,দয়া,দাক্ষিন্যতা ও শুভ দৃষ্টি উদয় হয়।
আবার সবচেয়ে বড় ভালোবাসা হচ্ছে দেশপ্রেম বা দেশের প্রতি ভালোবাসা। যারা দেশকে ভালোবাসতে জানে তারাই বিশ্ব মানবের হৃদয় স্পর্শ ও জয় করতে পারেন। ভালোবাসার মাধ্যমে বিশ্বশান্তি অর্জন করা যায়। উল্লেখ্য যে,মন্দ আচরণ ভালোবাসার সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করে। ব্যক্তিগত,সমাজ, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যে সমস্ত সমস্যা বা হানাহানি শুধুই উগ্রতা এবং খারাপ ব্যবহারের কারণে। ভালোবাসা থাকতে হয় মা-বাবা, ভাই-বোন,আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশ এক কথায় সকল মানুষের জন্য। একমাত্র ভালোবাসা দিয়েই পৃথিবীতে শান্তি আনা যায়। সুখ নিয়ে বসবাস করা যায়। পৃথিবী বাসযোগ্য হয়। বিশ্ব চড়াচড়ের বিশালত্বের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তম মনুষ্য জীবন কিছুটা সার্থক হয়। ভালোবাসা দিবসে আমাদের প্রতিশ্রুতি হোক – শুধু রঙিন হবো ও করবো দিবস নয়। ভালোবাসা দিবস নিয়ে কমবেশি বিতর্ক রয়েছে। মানবতাবাদী এক খ্রিষ্টান চিকিৎসক পাদ্রী জীবন বিসর্জন দিয়ে চিকিৎসা দ্বারা একটি জীবন রক্ষা থেকে ভালোবাসা দিবসের সূচনা হয়েছে মনে করা হয়। যদি এমনটি হয়ে থাকে তা মোটেও মূল্যহীন নয়। ভালোবাসার কারণেই জীবনটি রক্ষা পেয়েছিলো। ভালোবাসতে হবে সকল মানুষকে,সকল জীবকে। বাঙালি কবি শেখ ফজলুল করিম এর বিখ্যাত,” স্বর্গ ও নরক” কবিতার দুইটি চরণ দিয়ে লেখাটি শেষ করছি। “প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে/ স্বর্গ এসে দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়ে ঘরে”।
লেখক: সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও) ও উপদেষ্টা: দৈনিক নরসিংদীর নবকণ্ঠ

সংবাদটি সর্বমোট 199 বার পড়া হয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *