নবকণ্ঠ ডেস্ক : ব্রিটেনের দীর্ঘতম সময়ের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রয়াত হয়েছেন গত বৃহস্পতিবার। ব্রিটেনকে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে শাসন করে গেছেন তিনি। সফর করেছেন পৃথিবীর নানা দেশ। তার অসাধারণ জীবন ও শাসনামলে তিনি দুইবার বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কনিষ্ঠকন্যা শেখ রেহানারও সাক্ষাত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একজন প্রগতিশীল রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শেখ মুজিব বিশ্ব নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন। এরই অংশ হিসেবে লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে দেখা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুর্লভ মূহুর্তের একটি ছবিতে রানী এলিজাবেথের সঙ্গে করমর্দন করতে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুকে। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রিন্স ফিলিপ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সেই সময় তিনি ২৫তম কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলন যোগদান করেন। প্রধানমন্ত্রী একই স্থানে প্রিন্স চার্লস এর সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ দেশগুলোর অন্যান্য সরকার প্রধান ও নেতাদের সঙ্গে রাণীর দেয়া নৈশভোজে যোগ দেন।
অন্য দিকে এ বছরের ২ থেকে ৫ জুন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে ৭০ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে প্লাটিনাম জুবিলী উদযাপন অনুষ্ঠানমালার একটিতে যোগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠকন্যা শেখ রেহানা।
সর্বশেষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছিলেন, আমরা বন্ধুত্ব এবং স্নেহের অভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ, যা আমাদের অংশীদারিত্বের ভিত্তি হিসাবে রয়ে গেছে এবং এটি পঞ্চাশ বছর আগের মতো আজও গুরুত্বপূর্ণ।
৯৬ বছর বয়সী রানী গত বছরের অক্টোবর থেকে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন যা তাকে হাঁটতে এবং দাঁড়াতে অসুবিধায় ফেলেছিল। বুধবার, তিনি বিশ্রামের কথা বলে তার সিনিয়র রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের সাথে একটি পরিকল্পিত বৈঠক বাতিল করেন। আগের দিন তিনি তার স্কটিশ হাইল্যান্ডস রিট্রিট, বালমোরালে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিদায় এবং তার উত্তরসূরি লিজ ট্রাসের নিয়োগের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন।
ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ ৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থেকে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ রবিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ৩ দিনের শোক ঘোষণা করেছে সরকার। এ উপলক্ষে ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের আগে ১৯৬১ সালে একবার এই ভূখন্ডে এসেছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সে সময় তিনি ঢাকার সুগন্ধা স্টেট গেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। এই সফরে আদমজী জুট মিল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রানী। এরপর বঙ্গবন্ধুর সৌহার্দ্যের ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের ১৪ নভেম্বর দ্বিতীয় বার ৪ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ওই রাজকীয় সফরকালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ১৮ মাইল সড়কের বিভিন্ন স্থানে ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক’ লেখা রঙিন ব্যানার এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের পতাকা শোভিত ছিল।
রাজকীয় সফরের সময় তিনি চট্টগ্রামের একটি মডেল গ্রাম ও গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালায় যাওয়ার জন্য ট্রেনে ভ্রমণ করেছিলেন। চট্টগ্রামে তিনি চাল থেকে কিভাবে ‘মুড়ি’ তৈরী করা হয় তা দেখেছিলেন। এছাড়াও হস্তশিল্প, সোনার চাদর এবং মাটির পাত্র সহ বিভিন্ন কারুশিল্প রানীকে মুগ্ধ করেছিলো। এছাড়াও রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ট্রেনে করে ঢাকা থেকে শ্রীপুরে এবং পরে গাড়িতে করে বৈরাগীরচালা যান। রানীর ভ্রমণকে কেন্দ্র করে তার ভ্রমণের ট্রেনটি ফুল দিয়ে সাজিয়েছিলো বাংলাদেশ রেলওয়ে। এছাড়াও রানীকে মেটাল রিলিফ এবং স্ক্রলিং লিফ বর্ডার সহ একটি কাঠের ফলক উপহার দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। সরকার তার সম্মানে দশ টাকার পোস্টাল স্ট্যাম্পও প্রকাশ করেছিল। রানীর ভ্রমণের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে ছিল জাতীয় স্মৃতিসৌধ, যেখানে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে নিহতদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রাস এমপিকে লেখা এক শোক বার্তায় বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে মহামান্য রানী এবং আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি এবং অটোয়া ও কিংস্টনে দু’টি কমনওয়েলথ সরকার প্রধানের বৈঠক চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ তিনি লন্ডনে ২০১৮ সিএইচওজি -এ শেষ ব্যক্তিগত আলাপচারিতারও প্রশংসা করেন।
শোক বার্তায় তিনি আরো লিখেছেন, ‘বিশ্বের সমসাময়িক ইতিহাসে কিংবদন্তী এবং দীর্ঘতম রাজত্বকারী রানী হিসাবে কর্তব্য, সেবা এবং ত্যাগের সর্বোচ্চ নজির স্থাপন করেছেন এবং বিশ্বজুড়ে তার অগণিত মানুষের কাছে উৎসর্গের একটি অতুলনীয় উত্তরাধিকার রেখে গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন যে, রানী তার দেশের নাগরিকদের জন্য অনুপ্রেরণা, সাহস এবং শক্তির একটি দুর্দান্ত উৎস হয়ে থাকবেন। বাঙালি জনগণের বাড়িতে তার দু’টি ঐতিহাসিক রাজকীয় সফরের জন্য অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। সূত্র: বাসস
সংবাদটি সর্বমোট 141 বার পড়া হয়েছে