নবকণ্ঠ ডেস্ক:
চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪ ডিসেম্বরের জনসভা হবে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমুদ্র। উৎসবমুখর পরিবেশে শুধু পলোগ্রাউন্ড ময়দান নয়, সারা চট্টগ্রাম নগরীকে জনসমুদ্রের জনতরঙ্গে উদ্বেলিত করে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম আগমন উপলক্ষে আজ রোববার সকালে নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণকল্পে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ একথা বলেন।
সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, আগামী ৪ ডিসেম্বর প্রায় এক যুগ পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো পলোগ্রাউন্ড ময়দানে প্রকাশ্যে জনসভায় সশরীরে উপস্থিত হবেন। তাই এই দিনটি আমাদের সকলের জন্য উৎসবমুখর হয়ে উঠুক। তারই প্রস্তুতি নিতে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে থানায় অভূতপূর্ব গণজাগরণ ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি অপশক্তির দুর্বৃত্ত দল মাঠে নেমেছে। তারা মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। তাই এবার আবারও সময় এসেছে অনুধাবন করার যে, জনগণই ক্ষমতার উৎস- বন্দুকের নল নয়। আর আমাদের জনগণের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে নৌকা। নৌকা ছাড়া বাঙালির আর কোনো বিকল্প নেই।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ হচ্ছে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে কার্যকর ও সংগঠিত শাখা। দলের সকল ক্রান্তিকালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে ছিল। আবারও প্রমাণ করার সময় এসেছে যে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদেরকে এও প্রমাণ করতে হবে যে, বৃহত্তর স্বার্থে আমরা ক্ষুদ্র স্বার্থকে পরিহার করতে জানি। জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় এবং সংগঠনের সাংগঠনিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিজয় রথের চাকাকে সচল রাখতে সমর্থ হবো। তাই আগামী ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ডে শেখ হাসিনার জনসভার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানান দিতে হবে যে, আওয়ামী লীগ অবিনশ্বর এবং অপরাজেয় সংঘশক্তি।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ৪ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার জনসভা আমাদের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। আমরা প্রমাণ করবো যে, ওইদিন চট্টগ্রামে জনতার ঢল মহাপ্লাবণের মতো জেগে উঠবে। চট্টগ্রামে ৭০ লক্ষ মানুষের বসবাস। তাই এখানে কমপক্ষে ১০ লক্ষ মানুষের সমাবেশ করা কোন ব্যাপার নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের যে অভাবনীয় দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন, তা নজিরবিহীন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর আর আমাদেরকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই ঘুরে দাঁড়ানোর পথে চট্টগ্রাম শেখ হাসিনার একটি সহায়ক শক্তি। এখন আমাদের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের কর্তব্য হচ্ছে জনমানুষের সাথে সংযোগ বাড়িয়ে সরকার ও শেখ হাসিনার ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করা। তাহলে সকল ষড়যন্ত্র তাসের ঘরের মতো ভেসে যাবে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরসরাই ও আনোয়ারায় দুটি বিশাল অর্থনৈতিক জোনের শুভযাত্রায় আজ চট্টগ্রামের সাথে ভার্চুয়ালি সংযোগ চলমান রেখেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ফেনী থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূল পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ করে দেবেন। এধরণের একের পর এক উন্নয়নের ফলক তিনি চট্টগ্রামে স্থাপন করে গেছেন এবং আগামীতেও করে যাবেন। অথচ অসৎ উদ্দেশ্যে আজকে যারা সরকার পতনের ডাক দিয়েছেন, তারা এসব দেখেও দেখেন না। কারণ তাদের মগজের ঘাটতি রয়েছে। আজ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মহল বিশেষ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। তারা বলছে, ব্যাংকে টাকা নেই এবং চাষাবাদ না করলে জমি খাস হয়ে যাবে। এধরণের প্ররোচনামূলক অপপ্রচার প্রমাণ করে যে, বিএনপি নেতৃত্বের মাথায় ঘিলু নেই। কারণ তাদের চেয়ারপার্সন আন্ডারমেট্রিক, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আন্ডার ইন্টারমিডিয়েট। দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির নেতারা কেউ কেউ শিক্ষিত হলেও যেহেতু তাদের চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের লেখাপড়া নেই, সেহেতু তাদের নিচু স্তরের নেতাদের যে জ্ঞান বুদ্ধি বা শিক্ষা আছে তারও কোন দাম নেই। মাথায় যদি ঘিলু না থাকে, তাহলে হাত পাসহ শরীরের কোন অংশ কাজ করে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি দাবি করছে যে, তাদেরকে সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা ২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে ঘরছাড়া করতে চেয়েছিল, ধ্বংস করতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনার মুভমেন্ট বন্ধ করার জন্য গুলি চালিয়েছিল, এমনকি বাঁশখালীর সাধনপুরে ১১ জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হলে তখন শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম ছুটে এসেছিলেন। বাঁশখালিতে তাকে সভা করতে দেওয়া হয়নি। তিনি গাছতলার নিচে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীদের সাথে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে দেখা করেন ও তাদের সান্ত¡না দিয়েছিলেন। তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা এখন নিজেরা নিজেদের সমালোচনা না করে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মোকাবেলায় সর্বশক্তি নিয়োগ করি, তাহলে কিছুতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় রথকে আটকানো কারো পক্ষে সম্ভব হবে না।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় নগরীর ৪১ প্রশাসনিক ওয়ার্ড ও ৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কগণ ৪ ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার জনসভাকে সফল করার জন্য কি কি কার্যক্রম চলমান রেখেছেন, তা অবহিত করেন এবং জনসভায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে উপস্থিত থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলহাজ নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, উপদেষ্টা আলহাজ একেএম বেলায়েত হোসেন, আলহাজ সফর আলী, এনামুল হক চৌধুরী, শেখ মাহমুদ ইছহাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ বদিউল আলম, সম্পাদকম-লীর সদস্য আবদুছ ছালাম, নোমাল আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, হাসান মাহমুদ শমসের, এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মশিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মোহাম্মদ হোসেন, হাজী জহুর আহমদ, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, মানষ রক্ষিত, দিদারুল আলম চৌধুরী, আব্দুল আহাদ, আবু তাহের, ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী, শহিদুল আলম প্রমুখ।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামের জনসভা ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভা সংগঠনের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এড. বাসস্তী প্রভা পালিতের সঞ্চালনায় আজ রবিবার দোস্ত বিল্ডিংস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ সভাপতি রোমানা নাসরিন, সৈয়দা সাহেদা সুলতানা, রওশন আরা বেগম, সম্পাদকম-লীর সদস্য সাহিদা বিবি জেলী, রেজোয়ানা শারমিন, জান্নাতুল ফেরদৌস ডলি, রোকেয়া বেগম, জাহানারা নাজনীন, এড. বিবি আয়েশা, দিলরুবা ইয়াসমিন, রহিমা মনসুর, মনোয়ারা বেগম, মমতাজ বেগম, সেলিনা আকতার প্রমুখ।
সভায় এমএ সালাম বলেন, বাংলাদেশ বিরোধী গণতন্ত্রের শত্রু অগ্নি-সন্ত্রাসীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, অভাবনীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিরুদ্ধে বহুমুখী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তারা বাংলাদেশকে আবার সেই অন্ধকার সময়ে ফিরিয়ে নিতে চায়। তিনি বলেন, সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অতীতের মতো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় সর্বোচ্চ সংখ্যক নারীর উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত করার আহ্বান জানান। সভায় আগামী ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ থেকে ৪ শ কাউন্সিলর ও ডেলিগেট যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সূত্র: বাসস
সংবাদটি সর্বমোট 141 বার পড়া হয়েছে