নবকণ্ঠ ডেস্ক:
ইজিবাইকে আগে থেকেই বসে থাকেন দুজন। তার মধ্যে একজন ডাকতে থাকেন ‘আসেন আসেন, এখনই ছেড়ে দেবে’। অন্য একজন চিরকুটে মোড়ানো একটি চকচকে পিতলের বার রাস্তায় ফেলে রাখেন। পথচারীর ভূমিকায় থাকা আরেক যুবক চিরকুট তুলে নিয়ে পড়ে শোনান ইজিবাইকে বসে থাকা যাত্রীকে। অভিনব এমন কৌশলে মানুষকে প্রলুব্ধ করে নকল সোনা দেখিয়ে আসল সোনা ও টাকাকড়ি হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। গত প্রায় এক সপ্তাহে ময়মনসিংহের নান্দাইলের বিভিন্ন এলাকায় ১০ জন নারীর কাছ থেকে এমন অভিনব কৌশলে পিতলের বারকে সোনার বার দেখিয়ে নিঃস্ব করা হয়েছে। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই ঘটনা চেপে গেলেও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই খোয়া যাওয়া স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা উদ্ধারে ছোটাছুটি করছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নান্দাইল পৌরসভার একটি মহল্লার এক নারী উপজেলার মুশল্লী এলাকায় বেড়াতে যান। ইজিবাইকে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তিনি কাগজে মোড়ানো সোনার বারটি ও চিরকুটের লেখাটি পড়েন। সেখানে লেখা ছিল- ‘শ্রী রিপন বাবু স্বর্ণকার। পত্রে আমার প্রণাম নিবেন। সৌদি আরব থেকে এক নম্বর চার ভরি স্বর্ণ পাঠালাম। আমার ছোট বোনের বিয়ের জন্য চেইন লকেট ও মালা তৈরি করে পৌঁছে দিবেন’। প্রথমে যাত্রীবেশী প্রতারকরা চিরকুট পড়ে নকল স্বর্ণের টুকরাটি কিনতে নারীকে প্রলুব্ধ করেন। কিন্তু এতো টাকা তো তার কাছে নেই। একপর্যায়ে ওই নারীর পরনে যতটুকু স্বর্ণ রয়েছে এবং যা টাকা-পয়সা আছে তা দিয়ে সোনার বারটি বিক্রি হবে বলে প্রস্তাব দেয়া হয়। লোভে পড়ে তিনি নিজের শরীর থেকে সোনার চেইন, হাতের বালা, কানের দুল ও নগদ ৬৭০ টাকা দিয়ে কাউকে কিছু না বলে বারটি নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে যান। পরে চন্ডীপাশা এলাকার মা মনসা জুয়েলার্সে গিয়ে বার দেখালেই দোকানের মালিক জানান, এটা সোনা নয়, পিতল। এভাবে ওই নারী প্রতারণার ঘটনা বুঝতে পারেন। কিন্তু ইতিমধ্যে সর্বস্ব চলে গেছে।
একই ঘটনার শিকার হয়েছেন নান্দাইল পৌরসভার চন্ডীপাশা মহল্লার সবিতা রানী, জাহাঙ্গীরপুর এলাকার আসমা বেগম, নান্দাইলের চামারুল্লাহ পাড়া গ্রামের এক নারী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক), সিংরুইল ভাটিপাড়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম, বেতাগৈর ইউনিয়নের একটি গ্রামের রাজিয়া ও আয়েশা বেগম, রসুলপুর গ্রামের একজন, বনাটি গ্রামের দুই কলেজ ছাত্রী এবং শেরপুর ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের রেজিয়া বেগম। তিনি করোনার টিকা নিতে গতকাল সোমবার নান্দাইল সদরে আসতেই এদের কবলে পড়েন।
জানা যায়, ওই চক্রটি সচরাচর নারীদের টার্গেট করে। বিশেষ করে ইজিবাই ও অটোরিকশায় চলাচল করা যাত্রীরাই এদের খপ্পরে পড়েন। সোনার বার দেখানোর পাশপাশি বিশ্বাস স্থাপনের জন্য চিরকুট পড়িয়ে শোনানোর পর যাত্রীরা লোভে পড়ে মূল্যবান বারের জন্য নগদ টাকা ছাড়াও গায়ে থাকা স্বর্ণালঙ্কার নির্দ্বিধায় দিয়ে দেন।
নান্দাইল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, এ বিষয়ে এই প্রথম একটি অভিযোগ পেয়েছি। মমতাজ বেগম নামের এক ভুক্তভোগী অভিযোগ দায়ের করেছেন। খুব শিগগিরই তদন্তে নামছে পুলিশ। সূত্র: কালের কণ্ঠ
সংবাদটি সর্বমোট 232 বার পড়া হয়েছে