নূরুদ্দীন দরজী:
হঠাৎ করে মনে পড়ে গেলো আমাদের শৈশবকালের সেই কাগজের টুপির কথা। রঙিন কাগজের টুপি। দেখতে ও কিনতে ইচ্ছে হলো। চলে গেলাম আমাদের উপজেলা সদরে কাগজের টুপি কিনতে । মনে হয়েছিল বাজারের কোথাও না কোথাও দু,একটি দোকানে পাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে বাহিরে বিছিয়ে রাখা দোকানে হয়তো বা পাওয়া যাবে। কিন্তু না- বাজারে তন্নতন্ন করে খুঁজেছি কোথাও পাইনি। ঐ সব দিনের কাগজের টুপি আছে কিনা জানতে চাইলে অনেকের কৌতুহল বৃদ্ধি পায়। অনেককে হাসাহাসি করতে দেখেছি।
অথচ এমন এক দিন ছিল কাগজের ঐ সমস্ত টুপি না হলে ঈদের আনন্দই যেন মাটি হয়ে যেতো। বাবা ঈদ এলে ছেলেকে একটি সুন্দর ও রঙিন কাগজের টুপি কিনে দিয়ে আত্মতৃপ্তি পেতেন। ছেলের মাথায় টুপি পরিয়ে শত বেদনার মাঝে ও মা বাবার মুখে হাসির ঝলক দেখা যেতো। ঈদ আসার অনেক আগেই ছেলেরা রঙিন টুপি কিনে দেওয়ার বায়না ধরে ভেগু ভেগু করতো। অনেক বাবা ছেলেকে কোলে অথবা কাঁধে করে বাজারে নিয়ে যেতেন এবং ঈদের বাজার করার এক পর্যায়ে দোকানীর সাজিয়ে রাখা বহু টুপির মধ্য থেকে নিজের ও ছেলের পছন্দের টুপি কিনে দিতেন। সে সব কিনে কত যে আনন্দ ছিল তার সাক্ষী হয়ে আজ ও কাদের কতটুকু কি মনে আছে জানি না। অনেক মানুষের আর্থিক দৈন্যতার মাঝে আদরের ছেলেমেয়েকে টুপি কিনে দেওয়াতে মহা আনন্দ লুকিয়ে থাকতো। সে আনন্দের কথা আজ বুঝানো কোনভাবেই সম্ভব নয়।
টুপি মাথায় পরিধেয় এক প্রকার পোষাক বা শিরোনাস্ত্র। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা জাতি ও ধর্মের মানুষই টুপি পরেন। ঐ সমস্ত দেশে এর নাম ও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে আছে। যেমন-আরবী টুপি,সৌদী টুপি,কিস্তি টুপি, গান্ধী টুপি,জিন্নাহ টুপি,জালি টুপি ও ক্ষেত্র বিশেষে ঈদের টুপি, বিয়ের টুপি ইত্যাদি। আমাদের বাংলাদেশে অনেক টুপি তৈরি হয় এবং নিজেদের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।
মুসলমানেরা টুপি পরেন বেশি বেশি। আমাদের নবী করিম (সঃ) টুপি পরতেন যে জন্য মুসলমানদের জন্য এটি সুন্নাত। একমাত্র গোসল ও ঘুমানোর সময় ব্যতিত একজন মুসলমান সকল সময় টুপি পরতে পারেন। এমন কি বাথরোম/ মলমূত্র ত্যাগ করার সময় ও। টুপি পরা এবং তৈরি অনেক নেকের কাজ। টুপি পরতে কেউ অপছন্দ করে কিনা জানিনা -তবে কারো মাথায় টাক পরলে সে টাক মাথার জন্য টুপি পরতে বাধ্য হয়। ইসলাম ধর্মের অনেক খলিফা, রাজা বাদশাহ ও সম্রাটগণ টুপি তৈরি ও কোনআন শরীফ নকল করে বাজারে বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করতেন। মোঘল সম্রাট শাহজাহানের তয় পুত্র সম্রাট আওরঙ্গজেব টুপি সেলাই, তৈরি ও বিক্রি করে নিজের পরিবারের ভরণপোষণ করতেন।
বিভিন্ন রং ও সাইজের কাগজকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় টুপির সুন্দর সুন্দর রুপ দেওয়া যায়। সভ্যতার বিবর্তনে ও প্রযুক্তির বহুল ব্যবহারে কালের গন্ডি পেরিয়ে কাগজের টুপি আজ আর দেখা যায়না। মানুষের আর্থিক স্বচ্ছতায় অনেক ক্ষেত্রে এ টুপি আজ অবহেলার ও বস্তুুতে পরিনত হয়েছে। আজ আর কাগজের টপির প্রয়োজন হয়না, কাগজের টুপি তৈরি হয়না ও পাওয়া যায় না। কিন্তু ঐ কাগজের রঙিন টুপিই ছিল এক সময়ের ছেলেময়েদের ঈদ আনন্দের প্রধান অবলম্বন। লেখক: সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)
সংবাদটি সর্বমোট 261 বার পড়া হয়েছে