নবকণ্ঠ ডেস্ক: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সুপার টুয়েলভে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে আজ জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে এই জয়ে সেমিফাইনালে খেলার আশা টিকিয়ে রাখলো টাইগাররা।
৩ খেলায় ২ জয় ও ১ হারে ভারতের সমান ৪ পয়েন্ট হলেও রান রেটে পিছিয়ে থেকে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। ২ খেলায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে শীর্ষে ভারত। ৩ খেলায় ৩ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে পিছিয়ে চতুর্থ স্থানে জিম্বাবুয়ে।
ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের সুবাদে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫০ রান করে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ৫৫ বলে ৭১ রান করেন শান্ত।
জবাবে দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে জিম্বাবুয়েকে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৭ রানে আটকে রাখে বাংলাদেশ। ১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন তাসকিন। ১৫ রানে ২ উইকেট নেন ফিজ।
ব্রিজবেন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মেহেতি হাসান মিরাজের পরিবর্তে ইয়াসির আলিকে অন্তর্ভুক্ত করে একাদশ সাজায় জিম্বআবুয়ে।
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরে বলে পুশ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২ বলে কোন রান করতে না পারা ওপেনার সৌম্য সরকার। ৭১ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে এ নিয়ে ১১ বার শূন্যতে থামলেন তিনি। যা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সৌম্যর বিদায়ে ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খোলেন লিটন দাস। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বল পর্যন্ত আরও দু’টি চার মারেন লিটন। ঐ ওভারের তৃতীয় বলে মুজারাবানির বলে স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে তেন্ডাই চাতারাকে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ৩টি চারে ১২ বলে ১৪ রান করেন লিটন।
সৌম্য-লিটনকে হারিয়ে পাওয়ার-প্লেতে বাংলাদেশ ৩২ রানের সংগ্রহ পায়।
চার নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে শান্তর সাথে বড় জুটির চেষ্টা করেন সাকিব। রান তোলার গতি টি-টোয়েন্টি মেজাজেনা থাকলে ১০ ওভার শেষে ৬৩ রান পায় টাইগাররা। ১২তম ওভারে শান্ত-সাকিবের জুটিতে ৫০ পূর্ণ হয়। একই ওভারের শেষ বলে রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যান শান্ত।
হাফ-সেঞ্চুরি তুলে জমে যাওয়া শান্ত-সাকিব জুটি ভাঙ্গতে মরিয়া হয়ে ওঠেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। ছয় বোলার ব্যবহার করেও এ জুটি বিচ্ছিন্ন করতে পারছিলেন না । বাধ্য হয়ে ১৩তম ওভারে বাঁ-হাতি স্পিনার সিন উইলিয়ামসকে প্রথমবারের মত আক্রমনে আনেন আরভিন।
নিজের প্রথম ওভারেই বাজিমাত করেন উইলিয়ামস। ওভারের পঞ্চম বলে স্লগ করে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারার চেষ্টা করেন সাকিব। কিন্তু মিস টাইমিংয়ে বল আকাশে উঠে গেলে স্কয়ার লেগে মুজারাবানির দারুন ক্যাচে গুরুত্বপূর্ন ব্রেক-থ্রু পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় উইকেটে ৪৪ বলে ৫৪ রান করেন শান্ত-সাকিব। ১টি চারে ২০ বলে ২৩ রান করেন টাইগার দলপতি।
সাকিব ফেরার পরের ওভারে ১৪ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৪৫ বলে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করেন শান্ত।
ব্্রাড ইভান্সের করা ১৬তম ওভার থেকে ১৭ রান পায় বাংলাদেশ। ঐওভারে শান্ত ১টি ছয় ও ২টি চার মারেন। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে স্পিনার সিকান্দার রাজার শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেন শান্ত। মিড-অফ দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে আরভিনকে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৫ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৭১ রান করেন শান্ত।
১৬তম ওভারে শান্তর মারমুখী ব্যাটিংয়ের পর ১৭ ও ১৮তম ওভারে যথাক্রমে ৬ও ৫ রান পায় বাংলাদেশ। এতে ১৮ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৪ উইকেটে ১৩১।
১৯তম ওভারে আফিফ হোসেনের ১টি ছক্কায় ১২ রান উঠে। এনগারাভার করা ইনিংসের শেষ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৭ রান তুলে টাইগাররা। মোসাদ্দেক হোসেন ৭ ও আফিফ ১৯ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ২৯ রান তুলে এনগারাভার শিকার হন। রান আউটের ফাঁেদ পড়েন ১ রান করা নুরুল হাসান। এতে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫০ রানের পুঁিজ পায় বাংলাদেশ।
বল হাতে জিম্বাবুয়ের এনগারাভা ২৪ রানে ও মুজারাবানি ১৩ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
জিম্বাবুয়েকে ১৫১ রানের টার্গেট দিয়ে প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় বলে কাভার দিয়ে চার মারার পরের ডেলিভারিতে আউট হন ওপেনার ওয়েসলি মাধভেরে। ডিপ থার্ডে মুস্তাফিজকে ক্যাচ দেওয়া মাধভেরে ৩ বলে ৪ রান করেন। এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট শিকার করলেন তাসকিন।
নিজের দ্বিতীয় ওভারেও বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দেন তাসকিন। আগের মত তৃতীয় বলে চার হজমের পরের ডেলিভারিতে আরভিনকে শিকার করেন তিনি। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়া আগে ২টি চারে ৭ বলে ৮ রান করেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক আরভিন।
তাসকিনের জোড়া ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টায় থাকা জিম্বাবুয়ে ৫ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৩৫ রান তুলে তারা। পাওয়ার-প্লের শেষ ওভারে জিম্বাবুয়েকে খাদের কিনারায় ফেলে দেন মুস্তাফিজুর রহমান।
আগের দুই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উইকেটশূন্য থাকা মুস্তাফিজ আজ প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই ২ উইকেট তুলে নেন ফিজ।
ওভারের দ্বিতীয় বলে মিড-অফে সাকিবকে ক্যাচ দেন ৮ রান করা শুম্বা। পঞ্চম বলে স্কয়ার লেগে আফিফকে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে বিদায় নেন টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচের তিনটিতে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া দলের রাজা। রাজার বিদায়ে বাংলাদেশের আনন্দের মাত্রাটাও বেড়ে যায় বহুগুনে।
৩৫ রানের ৪ উইকেট পতনের পর পঞ্চম উইকেটে ৩৩ বলে ৩৪ রানের জুটি গড়েন রেগিস চাকাভা ও উইলিয়ামস। ১২তম ওভারে নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসেই বাংলাদেশকে আবারো প্রয়োজনীয় বেক-থ্রু এনে দেন তাসকিন। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ১৫ রানে থামেন চাকাভা।
৬৯ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে চাকাভার আউটের পর জুটি বাঁধেন উইলিয়ামস ও রায়ান বার্ল। ১৬তম ওভারে দলের রান ১শতে নিয়ে যান উইলিয়ামস ও বার্ল। এ সময় ৫ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ৪ ওভারে ৪৬ রান দরকার পড়ে জিম্বাবুয়ের। শেষ ২ ওভারে সমীকরন দাঁড়ায় ২৬এ।
সাকিবের করা ১৯তম ওভারের প্রথম তিন বলে ৭ রান নেন উইলিয়ামস ও বার্ল। চতুর্থ বলে আউট হন উইলিয়ামস। লড়াকু ইনিংসে ক্যারিয়ারের দশম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৮টি চারে ৪২ বলে ৬৪ রানে আউট হন উইলিয়ামস। গুরুত্বপুর্ন উইকেট হারালেও এই ওভারে ১০ রান পায় জিম্বাবুয়ে। শেষ ওভারে জিততে আফ্রিকান দলটির সামনে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৬ রান।
মোসাদ্দেকের করা শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে ইভান্সকে হারিয়ে ৫ রান তুলে জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় বলে ইভান্স ২ রানে আউট হন। চতুর্থ বলে ছক্কা মারেন এনগারাাভা। শেষ ২ বলে ৫ রান দরকার পড়ে। পঞ্চম বলে আউট হন এনগারাভা। শেষ বলটি নো-বল হয়। শেষ বলে ফ্রি-হিট থেকে মুজুরাবানি কোন রান নিতে না পারলে জয়ের আনন্দে ভাসে বাংলাদেশ। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৭ রান করে জিম্বাবুয়ে।
৪ ওভার করে বল করে তাসকিন ১৯ রানে ৩, মোসাদ্দেক ৩৪ ও মুস্তাফিজ ১৫ রানে ২ উইকেট নেন। উইকেটশূন্য ছিলেন হাসান ও সাকিব।
আগামী ২ নভেম্বর নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ ইনিংস :
শান্ত ক আরভিন ব রাজা ৭১
সৌম্য ক চাকাবভা ব মুজারাবানি ০
লিটন ক চাতারা ব মুজারাবানি ১৪
সাকিব ক মুজারাবানি ব উইলিয়ামস ২৩
আফিফ এলবিডব্লু ব এরগারাভা ২৯
মোসাদ্দেক ক চাতারা ব এরগারাভা ৭
নুরুল রান আউট ১
ইয়াসির অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (ও-৪) ৪
মোট (৭ উইকেট, ২০ ওভার) ১৫০
উইকেট পতন : ১/১০ (সৌম্য), ২/৩২ (লিটন), ৩/৮৬ (সাকিব), ৪/১২২ (শান্ত), ৫/১৪৭ (মোসাদ্দেক), ৬/১৪৯ (নুরুল), ৭/১৫০ (আফিফ)।
জিম্বাবুয়ে বোলিং :
এনগারাভা : ৪-০-২৪-২ (ও-১),
মুজারাবানি : ২-০-১৩-২,
চাতারা : ৩-০-১৮-০,
রাজা : ৪-০-৩৫-১,
ইভান্স : ৩-০-৩২-০ (ও-১),
মাধভেরে : ২-০-১৮-০,
উইলিয়ামস : ২-০-১০-১ (ও-১)।
জিম্বাবুয়ের ইনিংস :
মাধভেরে ক মুস্তাফিজ ব তাসকিন ৪
আরভিন ক নুরুল ব তাসকিন ৮
শুম্বা ক সাকিব ব মুস্তাফিজ ০
উইলিয়ামস রান আউট ৬৪
রাজা ক আফিফ ব মুস্তাফিজ ০
চাকাভা ক নুরুল ব তাসকিন ১৫
বার্ল অপরাজিত ২৭
ইভান্স ক আফিফ ব মোসাদ্দেক ২
এনগারাভা স্টাম্প ব মোসাদ্দেক ৬
মুজারাবানি অপরাজিত ০
অতি (লে বা-৯, নো-১, ও-৩) ১৩
মোট (৮ উইকেট, ২০ ওভার) ১৪৭
উইকেট পতন : ১/৪ (মাধভেরে), ২/১৭ (আরভিন), ৩/৩৫ (শুম্বা), ৪/৩৫ (রাজা), ৫/৬৯ (চাকাবভা), ৬/১৩২ (উইলিয়ামস), ৭/১৩৬ (ইভান্স), ৮/১৪৬ (এরগারাভা)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ৪-১-১৯-৩,
হাসান : ৩-০-৩৬-০ (ও-৩),
মোসাদ্দেক : ৪-০-৩৪-২ (নো-১),
মুস্তাফিজুর : ৪-০-১৫-২,
সাকিব : ৩-০-৩৪-০।
ফল : বাংলাদেশ ৩ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : তাসকিন আহমেদ (বাংলাদেশ)। সূত্র: বাসস
সংবাদটি সর্বমোট 207 বার পড়া হয়েছে