বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া : সিএনএনকে প্রধানমন্ত্রী

নবকণ্ঠ ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জোরালো পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। অব্যাহত এই যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিএনএন টিভিকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আমি মনে করি যে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এই যুদ্ধ (ইউক্রেনে) বন্ধ করতে বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত।’ সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব আজ সকালে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্কে (সিএনএন) সম্প্রচার হয়েছে এবং দ্বিতীয় অংশটি আজ রাতে প্রচারিত হবে।
যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি আমরা। কোনো বিরোধ থাকলে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যায়। আমরা কখনই কোনো ধরনের আগ্রাসন বা কোনো সংঘর্ষকে সমর্থন করি না।’ তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বিখ্যাত সাংবাদিক রিচার্ড কোয়েস্টের নেয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ইউক্রেনের যুদ্ধ, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং ঋণ দেয়ার মাধ্যমে চীনের সৃষ্ট মরণফাঁদ ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনেক প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বিদ্বেষ নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এটি অনুসরণ করছি, তাই যখন আমরা কোনও মানবাধিকার লঙ্ঘন বা আক্রমণ দেখি, আমরা অবশ্যই এর বিরোধিতা করি।’
তিনি বলেন, যুদ্ধ এক পক্ষের দ্বারা সংঘটিত হতে পারে না, উভয় পক্ষের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি দেশের নিজস্ব ভূখন্ডে (স্বাধীনভাবে) বসবাস করার এবং তাদের নিজস্ব অঞ্চল রক্ষার অধিকার রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তার দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সমর্থন করে এমন প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাড়ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলের কাছাকাছি, চীন, যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত। যারা আমাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করছেন, আমরা তাদের সঙ্গে আছি।’
তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার। তারা বিনিয়োগ করছে এবং কিছু নির্মাণকাজ করছে, ‘এটিই মূল কথা।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা কারো উপর নির্ভরশীল নই।’
চীন থেকে ঋণ নেয়ার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক। আমরা বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে বেশিরভাগ ঋণ নিয়ে থাকি। চীন থেকে আমাদের ঋণ খুবই কম। এটা শ্রীলঙ্কা বা অন্য কারো মতো নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অকারণে তাঁর সরকার কোনো ঋণ বা কোনো মেগা প্রকল্প নেয় না। কোনো মেগা প্রকল্প বা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করি কোন প্রকল্প থেকে আমরা রিটার্ন পেতে পারি এবং আমরা সুবিধাভোগী হব।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাংলাদেশের কী প্রয়োজন জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, তারা যেন তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দেয়। ‘শুধু তাই নয়, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সংলাপও শুরু করেছি। দুর্ভাগ্যক্রমে, তারা সঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ইতিমধ্যে চীন, আসিয়ান দেশ, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সাথে কথা বলেছে এবং মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির উপর চাপ দেয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করেছে।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, মিয়ানমার সরকার কারো কথাই শুনছে না। এটাই সমস্যা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশি (এক কোটি) মানুষের প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় দেওয়ার কথা বিবেচনা করে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা (১২ লাখ) বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বড় বোঝা’ হয়ে উঠছে। কারণ দেশটিতে অতিরিক্ত জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাওয়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাকে তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাওয়াতে হবে। আমাকে তাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।’ সূত্র: বাসস

সংবাদটি সর্বমোট 135 বার পড়া হয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *