নবকণ্ঠ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সারাদেশের সকল উপজেলায় চতুর্থ ধাপের ৩৯ হাজার ৩শ’ ৬৫টি গৃহ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের কাছে হস্তান্তর করবেন।
এর আগে প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯শ’ ৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৩শ’ ৩০টি এবং তৃতীয় ধাপে ৫৯ হাজার একশ’ ৩৩টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবারের পর হস্তান্তরিত মোট গৃহের সংখ্যা দাড়াবে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮শ’ ২৭টি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া আজ দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিক ও আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ ফেরদৌস খান উপস্থিত ছিলেন।
তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের মধ্যে দুই শতাংশ জমির মালিকানাসহ ৩৯ হাজার ৩শ’ ৬৫টি একক গৃহ হস্তান্তর করবেন।
তিনি বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে সারাদেশের সকল উপজেলায় একযোগে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের কাছে এই গৃহ হস্তান্তর করবেন।
মুখ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি তিনটি উপজেলায় উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। উপজেলা তিনটি হলো, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশাল জেলার বানারীপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প।
তিনি বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) দেশের ৭টি জেলা ও ১৫৯ টি উপজেলাকে সম্পূর্ণরূপে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করবেন। এর আগে পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলাকে তিনি ভূমিহীন-গৃহহীন হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
তোফাজ্জল হোসেন আরো বলেন, আগামীকাল গৃহ হস্তান্তরের পর দেশে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত জেলার সংখ্যা দাঁড়াবে ৯টিতে এবং উপজেলার সংখ্যা হবে ২শ’ ১১টি।
তিনি আরো বলেন, এই জেলা ও উপজেলাগুলোতে নদী ভাঙ্গন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অন্য কোন কারণে কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন হয়ে পড়লে সে সকল পরিবারকে চিহ্নিত করে জমির মালিকানাসহ গৃহ প্রদানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গৃহের জমির মালিকানা স্বামী-স্ত্রীর নামে দিয়ে দেওয়া হয়। জমির রেজিস্ট্রেশন, মিউটেশন ও দাখিলা পর্যন্ত তাদের নামে করে দেওয়া হয়। তাই গৃহের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের দায়িত্বও তাদেরকে দেওয়া হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, শুধু সরকারি খাস জমিতেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকেও জমি ক্রয় করে এই প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সহায়তাও গ্রহণ করা হচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে দেশে প্রথম ভূমিহীনদের পূনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমান লক্ষীপুর রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে একই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে পুনরায় জমি ও গৃহের মালিকানা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এই প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পরিবার প্রতি ৫ জন হিসেবে এই কার্যক্রমের উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প সরাসরি পুনর্বাসন করেছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি পরিবারকে। ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সমান কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসিত হয়েছে আরো ২ লাখ ১৬ হাজার ৭০৪টি পরিবার।
২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে দেশের কোন মানুষ ভূমিহীন- গৃহহীন থাকবে না বলে ঘোষণা করেন। তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) এই ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী শুধু মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সারাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি গৃহ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় সারাদেশে পুনর্বাসন কার্যক্রমের মোট উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ মানুষ।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে পরিবারভিত্তিক স্বামী-স্ত্রী’র যৌথ নামে ২ শতাংশ জমির মালিকানার দলিল ও নামজারি সম্পাদন করে দেওয়া হয়। এই জমিতে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ২ কক্ষ, প্রশস্ত বরান্দা, একটি স্যানিটারি টয়লেট ও একটি রান্নাঘর সম্বলিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব ডিজাইনের একটি অনন্য সাধারণ গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়। সূত্র: বাসস
সংবাদটি সর্বমোট 268 বার পড়া হয়েছে