আনোয়ার আলদীন:
সহোদরা মাঘ’কে রেখে বিদায় নিল রিক্ত পৌষ। আজ মাঘের পয়লা দিন। গ্রামীণ জনপদে আক্ষরিক অর্থেই মাঘ এলো শীতের দাপট নিয়ে। ‘শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে..’ এমন লঘু দৃশ্যপট ঘুচে গেছে। শীত এসেছে অনেকটা শীতের প্রকৃত চরিত্র নিয়েই। হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরাঞ্চলে শীতের ছোবলে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। হিমেল বাতাস শরীরে কাঁটার মতো বিঁধছে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় গতকাল শুক্রবার তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় উত্তরে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মাঘের শুরুতেই দাপটের সঙ্গে হাজির হবে শীত। তাপমাত্রা নামতে থাকবে। মেঘ-বৃষ্টি বন্ধ হয়ে শৈত্যপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন জেলায়। তবে রাজধানীবাসী এ মৌসুমে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের দেখা পাবে না।
মাঘের প্রকৃতি নীরস, শীতে জবুথবু। হয়তো তাই কবি-সাহিত্যিকদের কলমও থমকে যায়। বাংলা সাহিত্যে ঋতু-প্রকৃতি নিয়ে কথার ফুলঝুরি ফুটলেও মাঘের প্রসঙ্গ বড় দুর্লভ। তবে কৃষি ও কৃষকের সঙ্গে এর একটি যোগসূত্র রয়েছে। ‘পৌষের শেষ আর মাঘের শুরু/এর মধ্যে শাইল বোরো যত পারো।’ সাধারণত ৩০ দিনে মাঘ মাসের শেষভাগে কখনো কখনো বৃষ্টি হয়ে থাকে। এ মাসে আমের মুকুল আসে। পাতা ঝরে পড়ে। খনার বচনে বলে— ‘যদি বর্ষে মাঘ/গিরস্থের বন্ধে ভাগ (ভাগ্য)। “যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পুণ্যি দেশ”। মূলত বাংলাদেশ বিষুবরেখার উত্তরে। প্রায় সাড়ে ২৩ ডিগ্রি অক্ষাংশে। কিন্তু শীতকালে অবস্থান পরিবর্তন করে সূর্য বিষুবরেখার দক্ষিণে চলে যায়। দক্ষিণে কিছুটা হেলে থাকে। দিন ছোট হয়। বড় হতে থাকে রাত। ফলে শীতের প্রকোপ বাড়ে।
মাঘের শীত সবচেয়ে বেশি আলোচিত। এ মাসের পূর্ণিমাকে বলা হয় মাঘী পূর্ণিমা। মাঘে শীত জেঁকে বসে বলে মওসুমি আয়োজনগুলো আবহমান বাংলার ঐতিহ্যকে আরো সমুন্নত করে রাখে। কৃষাণি-রমণীরা যখন গৃহে ব্যস্ত থাকে ‘শীতালী’ খাবার পরিবেশনে তখন হাট-বাজার, ফুটপাতে পেশাদার পিঠাওয়ালা ব্যস্ত হয়ে পড়ে নাগরিকদের রসনা তৃপ্ত করতে। নতুন আলু, শিম, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, মুলা, শালগম ইত্যাদিতে কাঁচাবাজার ছেয়ে গেছে। ‘ভাপা’, ‘পুলি’, ‘চিতই’, ‘দুধচিতই’, ‘পাটিসাপ্টা’, ‘পাকনপিঠা’, ‘তেলের পিঠা’, ‘ম্যারা পিঠা’, ‘জামাই পিঠা’সহ আরো অনেক নামের ও স্বাদের পিঠায় রসনা বিলাসের আয়োজন চলছে বাড়ি বাড়ি। খেজুর রসের পায়েস আর খেজুর গুঁড়ের ম ম গন্ধে মাতোয়ারা দশদিগন্ত ।
‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’—প্রচলিত এ প্রবচনটি জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে আর সত্যি হয়ে উঠতে পারছে কমই। অগ্রহায়ণ থেকে শীত শুরুর কথা। তার ব্যত্যয় ঘটেছে। পৌষ শেষ দিকে লঘুচাপজনিত ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহ মিলে শীতের কামড় অনুভূত হলেও তা শীতের স্বাভাবিক চরিত্র নয়। এ কারণে মানুষের অসুখ-বিসুখও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা জ্বর-সর্দি, গলা ব্যথা ও ভেঙে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং আমাশয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের দ্রুত বিস্তারের সাথে এই শীতের রোগগুলো অনুষঙ্গ হয়ে জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। চিকিৎসকরা এ সময়ে খুব সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতেও ভিড়। জ্যাকেট-সোয়েটার, চাদর, মাফলার, কানবন্ধনী-টুপি, কম্বল-কাঁথা ইত্যাদি বেচাকেনা অনেক বেড়ে গেছে।
গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে যেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে। দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। পৌষের বিদায় বেলায় গতকাল রাজধানী ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ০ দশমিক । ময়মনসিংহে ১৪ দশমিক ৩, চট্টগ্রামে ১৮ দশমিক ৮, সিলেটে ১৪ দশমিক ৭, রাজশাহী ১৩ দশমিক ৫, রংপুরে ১৩ দশমিক ৩, খুলনায় ১৭ দশমিক ৫ এবং বরিশালে ১৬ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সূত্র: ইত্তেফাক
সংবাদটি সর্বমোট 197 বার পড়া হয়েছে