নবকণ্ঠ ডেস্ক:
হামিদ মিয়া, বয়স প্রায় ৫০ বছরের কাছাকাছি। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে। বাপ-দাদার পেশা ছিল ঘানি থেকে তেল করা। তিনিও ধরে রেখেছেন সেই পেশা। শুরুতে গরু দিয়ে ঘানি টানলেও এখন তিনি ঘোড়া দিয়ে ঘানি টানেন। বর্তমানে তার ঘানির তেল রপ্তানি হচ্ছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে। প্রতিদিন উৎপন্ন করে ৩ কেজি খাঁটি সরিষার তেল। যা বিক্রি করে চলে হামিদ মিয়ার সংসার। অভাব অনটন পিছু ছাড়ছে না তবুও ঘানির পেশাকে আকরে ধরে রেখেছেন তিনি।
প্রতিদিনের আয় ৫০০ টাকা দিয়ে পরিবারে ১০ জন সদস্যের খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। জীবনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন ৪টি ঘোড়া ও একটি ঘানিকে। এই ঘানিতে যারা সরিষা মাড়াই করে তেল বের করে তাদেরকে বলা হয় কলু। ঘানিতে এক বারে ৫ কেজি পরিমাণ সরিষা মাড়াই করা যায়, কলুদের ভাষায় তাকে একটি গাছ বলা হয়। আর একটি গাছ মাড়াই করতে ঘানি ঘোরাতে সময় লাগে প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। দেশে যখন ভেজাল তেলে আভয়াঅরণ্য সেখানে তিনি তৈরি করে যাচ্ছে শত ভাগ খঁটি সরিষার তেল। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্য সম্পর্কে খাঁটি হওয়ার কোনো সত্যতা পাওয়া না গেলেও খোঁজ মিলল ঘোড়ার ঘানির ১০০ ভাগ খাঁটি তেল। প্রায় ৪ দশক ধরে হামিদ মিয়া করে যাচ্ছে এই খাঁটি ঘানির তেলের উৎপাদন।
তার এই ঘানির তেল ১০০ ভাগ খাঁটি বলেই দাবি এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের। ভেজালের এই ভিড়ে আমরা আসলেই খাঁটি তেল ব্যবহার করতে পারছি বলে জানিয়েছে ভুক্তারা। উপজেলার শিবপুর বাজারের পাশেই হামিদ মিয়ার বাড়ি, ঘোড়ার ঘানির সাহায্যে সেই পুরাতন পদ্ধতিতে খাঁটি সরিষার তেল তৈরির ব্যবস্থা। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেল একটি টিনের ছাউনি করা ঘরের মধ্যে চারটি বেশ স্বাস্থ্যবান ঘোড়া দিয়ে চারটি ঘানিতে চলছে তার এই তেল তৈরির কর্মযজ্ঞ। দুইটি লাল এবং দুটি কালো ঘোড়া বেশ মোটাতাজা এবং বলবান বলেই মনে হলো। তবে ঘোড়াগুলোর চোখে কালো কাপড় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন কাপড় বাঁধা হয়েছে? জানতে চাইলে জানা যায়- চোখ বেঁধে দিলেই ঘোড়াগুলো ঘুরে, আর এতে সরিষা থেকে তেল বের হয়। ঘানিতে ঘোড়াগুলোর পরিশ্রমের ফলে প্রতিদিন ৩ কেজি করে সরিষার খাঁটি তেল বের করেন বলে জানান তিনি। এই খাঁটি সরিষার তেল ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। আমাদের নিত্য দিনের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ হলো তেল। সুস্বাদু খাবার রান্না করাসহ আরো অনেক প্রয়োজনে আমরা প্রতিদিনই তেল ব্যবহার করি। শিবপুরের ঘানি ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ আরো বলেন- যান্ত্রিক মেশিনের দাপটে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এই গ্রামে অনেকই এই পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল বর্তমানে একমাত্র আমার পরিবারই এ পেশায় টিকে আছে। সূত্র: কালের কণ্ঠ
সংবাদটি সর্বমোট 244 বার পড়া হয়েছে