মো. মনিরুল ইসলাম মনির:
মোঃ মোশারফ হোসেন সরকার পিতা মরহুম বাহাউদ্দিন সরকার করিমপুর গ্রামে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহ্যবাহি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্রের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করে সরকারী চাকুরীরত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অধীনে জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রে। সেই আশির দশকে আমার বয়স তখন ৭—৮ বৎসর করিমপুর পাবলিক ইন্সটিটিউট’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন সময়ে সমগ্র চরাঞ্চলের তথা ৪টি ইউনিয়নের সাহিত্যমনা সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব, সুশিক্ষিত, রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় ভাবে প্রতিষ্ঠিতদের সমন্বয়ে প্রতি বৎসরে ২/৩টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। যেখানে খেলাধুলা, কবিতা আবৃতি, উপস্থিত বক্তৃতা, আলোচনা সভা সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজনের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলার চেষ্টা করেছেন। আর আমি সে সময় থেকেই উনার সহচারে গিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতা থেকে উনার অনুপেরণায় জীবনকে গঠনের চেষ্টা করেছি। তিনি এ সকল সামাজিক কর্মকান্ডে সময় দিতে গিয়ে নিজের স্বচ্ছলতার কথা ভাবেননি। ভেবেছেন আমাদের সমাজ এলাকার তরুণ প্রজন্মকে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার কথা। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চরাঞ্চলের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে তাদের স্ব—স্ব এলাকার বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য এবং জন্ম স্থানের প্রতি তাদের দ্বায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি আশির দশকে ‘মেঘনা’ নামে একটি স্মরনিকা প্রকাশ করতেন ২১শে ফেব্রুয়ারি/বিজয় দিবস উপলক্ষে। কমপক্ষে ২টি সংখ্যা প্রকাশ করতেন। ৯০ এর দশকে যখন কলেজে পা রাখি তখন এই স্মরনিকায় বাণী লেখালেখি সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে যোগসূত্র স্থাপনের যাত্রা শুরু হয়। তিনি আমাকে বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সাহিত্যমনা, সৃজনশীল ব্যক্তিদের পাঠাতেন।
আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি চাকুরীর পাশাপাশি, বাসায় এসেই প্রচুর পড়াশুনা করতেন, এমনকি একবার বেতনের পুরা টাকা দিয়ে বাংলা একাডেমি থেকে নিলামে স্বাধীনতার যুদ্ধের দলিল ১৬ খন্ড বই কিনে বাসায় আসেন। তিনি চিন্তা করেননি সংসার কিভাবে চলবে। এই ঘটনাটি কেন্দ্র করে সংসারে ঝগড়াও হয়েছে। তার পরও তিনি ক্ষান্ত থাকেননি, উনার সংগ্রহে প্রচুর বই এখানো আছে। অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি সমগ্র নরসিংদী জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে নরসিংদী জেলার মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস একটি বই প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি শত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন।
চাকুরী জীবনে পাশাপাশি সকল সামাজিক কাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। তিনি প্রচুর পত্র পত্রিকা সাময়িকীতে অনেক শিক্ষনীয় লেখালেখি করেছেন। যাহা জাতীয় পর্যায়ে প্রকাশিত হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে অনুপ্রেরনা জুগিয়েছেন। তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে নরসিংদী থানা পাবলিক লাইব্রেরীর পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করছি।
লেখক: মোঃ মনিরুল ইসলাম মনির
সভাপতি
নরসিংদী থানা পাবলিক লাইব্রেরী
সংবাদটি সর্বমোট 309 বার পড়া হয়েছে