অনলাইন ডেস্ক:
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির মতামত নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ বা খোলা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে আগামীকাল রবিবার জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রী আজ শনিবার রাজধানীর ইমপেরিয়াল কলেজের রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাই না। টিকা নিয়ে যেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসে, সেটিরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হয়তো একটু অসুবিধা হতে পারে যারা ১২ বছরের কম বয়সী তাদের জন্য। সে বিষয়গুলো নিয়েও আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
নতুন করে আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের ধারণা ছিল মার্চ-এপ্রিলে বাড়বে। কিন্তু জানুয়ারির গোড়ার দিকেই বাড়ছে, কাজেই আমাদের যে পরিকল্পনা তাতে অ্যাডজাস্টমেন্ট কিছুটা দরকার হবে। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাই না। টিকা নিয়ে যেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসে, সেটিরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
শিখন ঘাটতি পূরণে নিরাময়মূলক ক্লাস নেওয়ার কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘দেড় বছরে লেখাপড়ায় যে ঘাটতি হয়েছে, সেটি পূরণের জন্য রেমিডিয়াল ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করছি। কিন্তু আমাদের অনেক সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। কারণ আবার করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। গত দেড় বছর শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি ক্লাস করতে পারেনি। শ্রেণিকক্ষে তাদের পাঠদান করানো যায়নি। অনলাইনে বা টেলিভিশনে করেছে, এতে যে ঘাটতি হয়েছে তাতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করতে হবে। কিন্তু যেভাবে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই চলছেন অনেকে, তাতে করোনা সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষার ক্ষতিটাই বেশি হবে, সেটাকে মাথায় রেখে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে, আমরা প্রত্যেকে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। এটি সবাইকে মানতে হবে। আমি সবার কাছে আবেদন জানাব সামাজিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বা অন্য যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান হোক আমরা সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি।’
রজত জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় প্রযুক্তি জ্ঞানের সঙ্গে সঠিক দক্ষতা থাকতে হবে। সেই সাথে মানসিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ থাকতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের তৈরি হতে হবে খুব ছোটবেলা থেকে পরিবারে মাধ্যমে। পরিবার যেমন শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলে তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলার অনেক দায়িত্ব আছে। শিক্ষাব্যবস্থায় যদি মানসিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ না থাকে তাহলে শিক্ষার্থীকে সেভাবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আর সে জন্যই আমরা নতুন কারিকুলাম করছি। সেই কারিকুলাম শুধু পরীক্ষানির্ভর ও সনদসর্বস্ব নয়, হতে হবে আনন্দময়, দক্ষতানির্ভর, প্রয়োগ যাতে করতে পারে। শিখলাম পরীক্ষা দিলাম, ভুলে গেলাম কোনো লাভ নেই। যা শিখছি তা যেন প্রয়োগ করতে পারি বাস্তব জীবনে, সেভাবেই শিখতে হবে। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে, সুনাগরিক হিসেবে ও বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলব।’
শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে আমাদের চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এখন দুনিয়া জুড়ে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের সঙ্গে আমাদের অভ্যস্ত হতে হবে। এই প্রযুক্তির জন্য আমাদের তৈরি হতে হবে। এই শিল্প বিপ্লবের সফল অংশীদার আমরা হব, এই প্রত্যয় থাকতে হবে। কারণ আমারা আগের শিল্প বিল্পব ধরতে পারিনি। এবার ধরতেই হবে। আমাদের প্রযুক্তিবান্ধব ও বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া জাতি উন্নত হয় না। তাহলে সেই শিক্ষা কেমন হবে? সেটা ভাবা খুব দরকার, আমরা ভাবছি। ২০১৮ সাল পর্যন্ত চেষ্টা করেছি সবাইকে শিক্ষার আওতায় আনতে। সেটা মোটামুটি এসে গেছে। এখন আমাদের নজর শিক্ষার মানের দিকে। টেকসই উন্নয়নের ১৭টি লক্ষ্যে মধ্যে শিক্ষা চার নম্বর। শিক্ষার মধ্যে কতগুলো লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। একটি হচ্ছে সবাইকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা। সেই শিক্ষা থেকে কেউ যেন বাদ না পড়ে। আরেকটি হচ্ছে সমতা বা সাম্যের জায়গা তৈরি করা। এর সঙ্গে মানসম্মত শিক্ষা, আরেকটি হচ্ছে জীবনব্যাপী শিক্ষা। এই আন্তর্জাতিক অঙ্গিকারগুলো আমাদের পূরণ করতে হবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী রূপকল্প দিয়েছেন ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হব। ডিজিটাল বাংলাদেশ হব। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। খুব শিগগিরিই মধ্যম আয়ের দেশ হব।’ প্রধানমন্ত্রী আরো আরেকটি স্বপ্ন দেখিয়েছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় দেশ হবে বলে জানান তিনি। সূত্র: কালের কণ্ঠ
সংবাদটি সর্বমোট 238 বার পড়া হয়েছে